Tuesday, August 27, 2024

পাত্রী বাছাই করতে ইসলামের নির্দেশনা


পাত্রী নির্বাচনে ইসলামের নির্দেশনা

বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন। যার মাধ্যমে অচেনা অজানা নারী–পুরুষের যুগলবন্দি জীবনের সূচনা হয়। সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ বিভিন্নভাবে উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে এ বিয়ে বন্ধন সম্পন্ন করেন। সুখী দাম্পত্য জীবন যাপনের লক্ষ্যে শুরু হয় নতুন জীবন। নতুন একটি সংসার।

সাধারণত আমাদের সমাজে বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রীর ধন সম্পদ উচ্চশিক্ষা ও বংশের বিষয়ে খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। 

বিয়ে ভীতির ঘটনাও ইদানীং অনেক বেশি আমাদের চোখে পড়ছে। তাই বিয়ে বিচ্ছেদ ও তালাক-ডিভোর্স এড়িয়ে দাম্পত্যজীবনকে সুখীময় করতে পাত্র পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুণীজনরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে হবু বধূর গুণাবলি সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

 যাতে দাম্পত্য জীবন হয় সুখী ও সমৃদ্ধিময়। সার্বিক দিক বিবেচনায় পরামর্শগুলো অত্যন্ত সুন্দর এবং খুব দামি। আমরা যদি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারি, তবেই আমাদের দাম্পত্য জীবন হতে পারে সুখময়। বিশেষ করে যারা এখনো বিয়ে করেননি। তাদের জন্য।


সাধারণত আমাদের সমাজে বিয়ের জন্য পাত্র বা পাত্রীর ধন সম্পদ উচ্চশিক্ষা ও বংশের বিষয়ে খুব বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। অথচ এক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ের ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা হাদিসে বলা হয়েছে। সাধারণত ধার্মিক মানুষের মধ্যে হিংসা, অহংকার, দাম্ভিকতা ইত্যাদি থাকে না। তারা অত্যন্ত বিনয়ী এবং আল্লাহভীতি লালল করেন।


ওলামায়ে কেরাম লিখেছেন, সাধারণ বা নিম্ন আয়ের একজন মানুষের জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে একজন দরিদ্র শ্রেণির নারীকেই বিয়ে করা ভালো। ধনী নারীকে বিয়ে করা উচিত না। এমনকি ধনী শ্রেণির জন্যও তার চেয়ে তুলনামূলক কম ধন সম্পদের অধিকারী এবং দিনদার নারীকে বিয়ে করা উচিত। কারণ, যে ব্যক্তি ধনাঢ্য নারীকে বিয়ে করবে, সে পাঁচটি বিপদে পতিত হবে-


১. মোহর বেশি দিতে হবে। আর বাস্তবেও আমরা লক্ষ করব– মোহর বেশি ধরা হয়। কিন্তু পরিশোধ করা হয় না। অথচ এটা একজন নারীর প্রাপ্য অধিকার।

 

২. যদি কোনো কারণ বশত বিয়ে ভাঙতেই হয় তবে এক্ষেত্রে খুব বেশি বিলম্ব হবে। টালবাহানা হতে থাকবে। কারণ, তার বিভিন্ন চাহিদা দাবি ইত্যাদি বাহানা শেষ হবে না।

 

৩. স্ত্রীর মাধ্যমে কোনো সেবা-যত্ন পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। অনীহা অনিচ্ছা থাকতে পারে। অথচ যা আমাদের যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্য। আর নারীর যত্ন সেবা ইত্যাদি একজন পুরুষের জন্য প্রায় সর্বদা দরকারও বটে।


৪. স্ত্রী খুব বেশি খরচপাতি চাইবে। যা বর্তমানে অনেক নারীর অভ্যাস হয়ে উঠছে। কারণ আগ থেকে হাত খরচা বেশি করে নেওয়া এবং খরচে অভ্যস্ত জীবন যাপন করা ইত্যাদি।  


৫. যদি অপারগতার কারণে তালাক দিতে হয়। প্রয়োজন পড়ে, তবে চাইলেও সম্পদের লোভ তালাক থেকে বিরত রাখবে। দাম্পত্য জীবন আরও অতিষ্ঠ হয়ে উঠবে।


আর চারটি বিষয় স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর নিম্নস্তরের হওয়া উচিত। অন্যথায় স্ত্রীর চোখে স্বামী হেয় প্রতিপন্ন হয়ে থাকবে-

 

১. বয়স। অন্তত পাঁচ বা সাত বছরের ব্যবধান থাকা ভালো। ২. শারীরিক দৈর্ঘ্য। স্বামীর শারীরিক গঠন দৈর্ঘ্য ইত্যাদি বেশি থাকা উচিত। ৩. সম্পদ। স্ত্রীর থেকে অর্থ সম্পদ বেশি থাকা উচিত। ৪. বংশ-মর্যাদা। অন্ততপক্ষে সমান বংশ-মর্যদার হওয়া উচিত।

 

আর চারটি বিষয়ে স্ত্রী স্বামী থেকে উচ্চস্তরের হওয়া জরুরি-

১. সৌন্দর্য। স্ত্রীর সুন্দর রূপ সৌন্দর্য থাকা, যাতে দৃষ্টি হেফাজত থাকে অন্য মহিলাদের থেকে। 

২. আদব-আখলাক। স্ত্রীর আদব –আখলাক, নম্রতা ভদ্রতা ও শিষ্টাচারের গুণ থাকা উচিত।

 ৩. তাকওয়া। তথা স্ত্রীর আল্লাহভীতি বা ধার্মিকতা। যা তার স্বামীকে যাবতীয় অন্যায় ও গুনাহ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে। 

৪. চরিত্র। অর্থাৎ, স্ত্রীর জন্য স্বামীর চেয়ে উত্তম স্বভাব চরিত্রের হওয়া উচিৎ।


উপর্যুক্ত এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে পাত্র–পাত্রী নির্বাচন করা হলে। স্বামী স্ত্রী উভয়ই সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।


লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর।

No comments:

Post a Comment